যশোরের ভবদহ অঞ্চলে অভয়নগরসহ তিন উপজেলার ৫০ টি বিল এবং ৪০ টি গ্রামে জলাবদ্ধতা

মোঃআমিনুর রহমান প্রকাশিত: ৭ আগস্ট , ২০২৫ ১৫:৫৯ আপডেট: ৭ আগস্ট , ২০২৫ ১৫:৫৯ পিএম
যশোরের ভবদহ অঞ্চলে অভয়নগরসহ তিন উপজেলার ৫০ টি বিল এবং ৪০ টি গ্রামে জলাবদ্ধতা

টানা বৃষ্টিতে অভয়নগরসহ যশোরের তিন উপজেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় টানা বৃষ্টিতে যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার প্রায় ৫০টির অধিক বিল প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন উপজেলার ৪০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো পরিবার।
সমস্যা সমাধানে দ্রুত নদী ও খাল থেকে নেট-পাটা-জাল ও কচুরিপানা অপসারণ করে নদী ও খাল খননের পাশাপাশি টিআরএম চালুর দাবি স্থানীয়দের।

যশোর সদর, অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের পানি শতাধিক খাল হয়ে টেকা, মুক্তেশ্বরী, শ্রীহরি নদী এবং ভৈরব নদ দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু  নদী ও খালগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া নদী-খালে মাছ শিকারীদের নেট, পাটা, জাল ও কচুরিপানা থাকার  ফলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে যশোর জেলায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৯৯ মিলিমিটার। জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৫২৫ মিলিমিটার। অতি বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলের প্রায় ৫৪টি বিল প্লাবিত হয়ে ৪০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মাছের ঘের ভেসে গেছে, তলিয়ে গেছে সবজি ও ধানক্ষেত।

অভয়নগর কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় উপজেলার ২৮৫ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। এছাড়া ২৫০ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৩০০ ছোট-বড় মাছের ঘের ভেসে গেছে। একই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলায়। তবে এ দুই উপজেলায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি মৎস্য অফিস।

অভয়নগরের চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের কামরুল হাসান বলেন, তিনটি মাছের ঘেরে কোটি টাকার মাছ ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে ঘের ভেসে গেছে।
মনিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া গ্রামের হরিহর বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিদিনই জল বাড়ছে। উঠানে জল, ঘরের বারান্দায় জল। এভাবে জল বাড়তে থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে ঘরছাড়া হতে হবে।’ কেশবপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিউটি খাতুন বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। সরকারি কোনো সহযোগিতা মেলেনি। চরম কষ্টে পরিবার নিয়ে দিন কাটছে।’
অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে মাইকিং করা হয়েছে। তারপরও সরকারি নদী ও খাল থেকে মাছ শিকারীরা নেট, পাটা ও কারেন্ট জাল অপসারণ করেনি। এছাড়াও রয়েছে  কচুরিপানা। এসব কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গ্রামগুলোতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।’
ভবদহ পানি নিষ্কাশন ও কৃষি রক্ষা জোটের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মতলেব সরদার বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে ত্রাণের পরিবর্তে সমস্যার স্থায়ী সমাধান দাবি করে আসছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত নদী ও খাল থেকে নেট, পাটা, কারেন্ট জাল ও কচুরিপানা অপসারণ করতে হবে। নদী ও খাল খননের পাশাপাশি টিআরএম (জোয়ারধারা) প্রকল্প চালু হলে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান দৃশ্যমান হবে।’
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী  বলেন, ‘অভয়নগরে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে খুলনার কুলবাড়িয়া পর্যন্ত হরি নদী, মনিরামপুর থেকে কেশবপুর পর্যন্ত হরিহর নদী, কেশবপুরের বরেঙ্গা থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত আপার ভদ্রা নদীসহ ছয়টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননের কাজ করবে সেনাবাহিনী। এছাড়া ভৈরব নদের সঙ্গে যুক্ত আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে বিশ্ব ব্যাংক ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ঠিকাদার নিয়োগও সম্পন্ন হয়েছে।’


 

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo