রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিলকুমারী বিল টানা কয়েক মাস শুকিয়ে পড়ে ছিল মৃত্যুপুরির মতো। তবে সম্প্রতি টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সেই নিস্তব্ধতা কাটিয়ে আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রাকৃতিক এ জলাশয়টি। এখন সেখানে পানিতে থৈ থৈ করছে, ফিরেছে জীবনের ছন্দ। ফলে স্থানীয় জেলেপাড়ায় ফিরে এসেছে স্বস্তি আর নতুন করে বাঁচার আশা।
গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির কারণে বিলজুড়ে পানি জমে উঠেছে। মাছ ধরতে শুরু করেছেন স্থানীয় জেলেরা। অনেক দিন পর আবারও নৌকা বেয়ে, জাল ছুঁড়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে জেলেদের। এর ফলে দীর্ঘ সময় পানিশূন্যতায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করা জেলে পরিবারগুলোতে আবারও হাসি ফিরে এসেছে। তানোর উপজেলার কুঠিপাড়া, গোল্লাপাড়া জেলেপাড়া, গোকুলসহ বিলকুমারী বিলঘেঁষা কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ বছরের বেশিরভাগ সময় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। অন্যান্য বছর বিলে কিছু না কিছু পানি থাকলেও এ বছর দীর্ঘ চার মাস ধরে পুরোপুরি শুকিয়ে ছিল বিলটি। মাছ না থাকায় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েন, অনেক পরিবার পড়েন চরম আর্থিক সংকটে। স্থানীয় জেলে সাজ্জাদ ও আশরাফুল বলেন, “গত চার মাসে বিলের এক ফোঁটা পানিও ছিল না। মাছ ধরতে পারিনি। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন বৃষ্টি হয়ে পানি এসেছে, মাছও উঠছে। আমরা আবারও কাজ শুরু করতে পেরেছি।
তবে বিলের এই নবজীবন রক্ষায় প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বিলকুমারী বিলে কিছু অসাধু ব্যক্তি কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ নিধন করছেন, যার ফলে প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারা জানান, প্রাকৃতিক এই সম্পদ রক্ষা করতে হলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যবহার কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।
স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউনো) লিয়াকত সালমান ও মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এলাকাবাসী বলেন, “বিলের মাছ রক্ষা করতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে কিছু দিনের মধ্যেই আবার নিঃশেষ হয়ে যাবে এই প্রাকৃতিক সম্পদ।
বিল রক্ষায় কঠোর নজরদারি, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত অভিযানের দাবি জানিয়ে জেলেরা জানান, তারা চান নিয়ম মেনে মাছ ধরতে এবং বিলকে টেকসইভাবে ধরে রাখতে। এই প্রতিবেদনটি স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছে, যাতে বিলকুমারীর নতুন জীবনে স্থায়ীত্ব আসে এবং হাজারো পরিবারে জীবিকার স্থায়ী গতি ফেরে।