জামালপুরে গ্রাম্য সালিশে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ না পেয়ে পিটিয়ে ও মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাত পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার (১৪ জুন) জামালপুর সদর থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক। এর আগে শুক্রবার (১৩ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের সমাজচ্যুত করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) জামালপুর পৌর শহরের দাপুনিয়া এলাকার মো. মন্টু মিয়া ও একই এলাকার আহাম্মদ আলীর ছেলে মো. মুনছুর মিয়ার বিদ্যুতের লাইন নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর শুক্রবার জুমার নামাজের পর উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে দাপুনিয়া পশ্চিমপাড়া বকুলতলা মোড়ে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে। সালিশে বিষয়টি মিমাংসার জন্য স্থানীয় শামিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন মুনছুর মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ৫০ হাজার টাকা না দিলে মুনছুর মিয়াসহ সাত পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হবে বলে জানান শামিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম। পরে মুনছুর মিয়া দাবীকৃত ৫০ হাজার টাকা না দিলে ঐদিন রাত ১১টায় দিকে মাইকিং করে সাত পরিবারের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে সমাজচ্যুত করা হয়। মাইকে আরও বলা হয় ওই সাত পরিবারের সঙ্গে যদি সমাজের কোনো মানুষ ওঠা-বসা করে তাহলে তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হবে। মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার, ও প্রকাশ্যে রাস্তা ঘাটে চলাফেরা করতে দেখলে ওই পরিবারের মানুষ ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
ইসমাইল মৌলবীর ছেলে মৌকির হোসেন জানান, ‘মন্টু মিয়ার সঙ্গে মুনছুর মিয়ার ঝামেলা হইছে। আমরা তাদের গোষ্টির লোক হওয়ার কারনে অযথা আমাদেরকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। আমরা ভয়ে কোথাও যেতে পারছি না।
ভুক্তভোগী জহুরুল ইসলাম আনন্দ বলেন, ‘মাইকে ঘোষনা দেয়ার পর থেকে দোকানদাররা আমাদের কাছে কোনো কিছু বিক্রি করছে না। ছোট বাচ্চারা দোকানে গেলেও তাদের কোনো খাবার কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। এখনো বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
থানায় অভিযোগকারী ইসমাইল বলেন, ‘ঘোষের টাকা না দেওয়ায় আমাদের সাত পরিবারকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সমাজচ্যুত করেছে। তারা মাইকে বলেছে, সাত পরিবারের মানুষকে মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার, ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখলে মানুষ ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিবে।’
এ ঘটনায় মন্তব্য নেয়ার জন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উভয় পক্ষ একই এলাকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’