জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ময়মনসিংহের ত্রিশালে তারা আয়োজন করেন প্রতীকী ‘লাল কার্ড’ কর্মসূচি, যেখানে তারা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উপস্থিতিকে দেশের সার্বভৌমত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরে জাতিসংঘের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেন:
১. সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের আশঙ্কা:
শিক্ষার্থীদের মতে, জাতিসংঘ অফিস স্থাপনের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বাড়বে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
২. আন্তর্জাতিক দ্বিচারিতা:
ফিলিস্তিনে চলমান মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে জাতিসংঘের নীরবতা এবং ইসরায়েলের প্রতি তাদের পক্ষপাতমূলক অবস্থান শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্ট করেছে।
৩. সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ:
সমাবেশে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, জাতিসংঘ অফিস থেকে এলজিবিটিকিউ অধিকার ও পতিতাবৃত্তির মতো বিতর্কিত ইস্যুতে চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে, যা দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৪. বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে আঘাত:
যেসব দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রকট, সেখানে এমন অফিস স্থাপন সাধারণ বিষয় হলেও, শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তিকর বার্তা দেবে।
৫. পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ:
জাতিসংঘ অফিসের আড়ালে মার্কিন আগ্রাসনের সুযোগ তৈরি হবে বলে শিক্ষার্থীরা মনে করেন। এর মাধ্যমে গোপন রাজনৈতিক চুক্তি ও প্রভাব বিস্তারের পথ সুগম হতে পারে।
৬. বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ:
জাতিসংঘের চাপ প্রয়োগে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যা অপরাধ দমনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ রায়হান। তিনি বলেন,
“যে জাতিসংঘ মুসলিম দেশগুলোতে সমকামীতা ও পতিতাবৃত্তিকে মানবাধিকারের নামে চাপিয়ে দিচ্ছে, সেই সংগঠন আজ আমাদের দেশে এসে মানবাধিকার শেখাতে আসছে এবং এটা আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি সরাসরি অবমাননা।”
তিনি আরও বলেন,
“আমরা অবশ্যই মানবাধিকারের পক্ষে, তবে তা যেন আমাদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।”
শিক্ষার্থীরা দেশের সচেতন জনগণ, শিক্ষক সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহ্বান জানান এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার জন্য।
সমাবেশের শেষে প্রতীকীভাবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়কে ‘লাল কার্ড’ প্রদর্শন করে তাদের বিরোধিতা প্রকাশ করেন।
এই সমাবেশ দেশের বহু সচেতন নাগরিকের গভীর উদ্বেগ আপত্তির প্রতিফলন। শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ এর মাধ্যমে বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে বাংলাদেশ কোনো ধরনের গোপন বৈদেশিক প্রভাব বা আগ্রাসনের কাছে মাথানত করবে না।