গৌরীপুরে তামাকবিরোধী আন্দোলনের সফল সংগঠক রইছ উদ্দিন

শামীম খান প্রকাশিত: ২৯ মে , ২০২৫ ১৬:৩৩ আপডেট: ২৯ মে , ২০২৫ ১৬:৩৩ পিএম
গৌরীপুরে তামাকবিরোধী আন্দোলনের সফল সংগঠক রইছ উদ্দিন

বাবার দেয়া চুমোর আদরে মিশে থাকা তামাকের উৎঘট দূর্গন্ধই, তামাকের বিরুদ্ধে নিয়ে যায় রইছকে’। সেই শৈশব থেকে কিশোর এবং যুব প্রতিটি স্তরে দাপেদাপে ধাপিয়ে বেড়িয়েছেন তামাকের বিরুদ্ধে; তাই আজ ‘তিনিই’ স্লোগান। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পরিচিতদের ‘সমীহ’-এর স্থানটাও তিনি অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তিনি একাধিক মাদক কোম্পানীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বিজ্ঞাপন অপসারণে ও অবৈধ প্রচারণা বন্ধেও তিনি সক্ষম হন। তামাকবিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবেও স্বীকৃতি অর্জন করেন। কাল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।’
তার পুরো নাম মো. রইছ উদ্দিন। পৌর শহরের সতিষা গ্রামের মৃত আলাল উদ্দিন ও মোছা. সখিনা খাতুনের দ্বিতীয় পুত্র। জীবনের প্রথম এ আন্দোলন শুরু করেন ‘সতিষা ও কিশোর সংঘ’ নামের স্থানীয় একটি সংগঠনের ব্যানারে। সেটা ছিলো ১৯৯৫ সন। ১৯৯৬সনে তামাকবিরোধী দিবস উদযাপন শেষে শহিদ মিনারে ‘তামাকবিরোধী শপথ’ গ্রহণ করেন তার নেতৃত্বে দুই শতাধিক শিশু-কিশোর। এটাই ছিলো গৌরীপুরে ‘প্রথম বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস’ উদযাপন’। এর ধারাবাহিকাতায় প্রতিবছর এ আন্দোলন চলতে থাকে। 
সতিষা যুব ও কিশোর সংঘ প্রাঙ্গন ও কার্যালয়কে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয় ১৯৯৮সনে। তবে সেই সময় সংগঠনের বাঁশের ছাটাইয়ের বেড়া ছিলো। তিনি জানান, সাদা-কালো টেলিভিশনে সেবছর বিশ্ব ফুটবল খেলা দেখছিলাম আমরা। ভিতরে ধূমপান নিষেধ, আবার উঠে গেলে বেঞ্চে ঠাঁই পাওয়া যাবে না। তাই আবুল হাসিম নামে একজন উদ্ভুদকাণ্ড করেন। আরেকজনকে বাহিরে পাঠান, তিনি বাহিরে বিড়িতে আগুন ধরান, সেই বিড়ি কিছু অংশ বেড়া ফাঁক করে ভিতরে ঢুকিয়ে দেন। হঠাৎ করে আমরা দেখতে পাই, আবুল হাসিম ঘরের ভিতরে বেড়াতে চুমু দিচ্ছেন। অর্থাৎ বাহিরে থেকে দেয়া বিড়ি তিনি টানছেন, এ কাণ্ড দেখে ভিতরে হাসিতে সবাই লুটিয়ে পড়েন।
তার উদ্যোগে ২০০৩সনের ১৯জানুয়ারি গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়কে এবং ওই বছরেই উপজেলা পরিষদ চত্বরকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহান আরা বানু। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন অনুমোদন হওয়ার আগেই শহরের ২শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে তিনি ধূমপানমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করান। এ সময় এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় গৌরীপুর যুগান্তর স্বজন সমাবেশও।
তিনি আরো জানান, ২০০৪ সনে ১ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ওয়াকসর্প ফর ইমপ্লেমেন্টেশান অফ টোবাকো কন্ট্রোল ‘ল’ শীর্ষক কর্মশালা ঢাকা প্রেসক্লাবের সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই ওয়ার্কসপ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সৌখিন বাসের ডি-৩ বসেন। সি-৩ নং সিটে বসা ভদ্রলোক সিগারেট ধরান। তখন প্রতিবাদ করেন তামাকবিরোধী এ সংগঠক। সেই বাসের সুপারভাইজারকে ডেকে এনে এ ভদ্রলোক বললেন, পিছনের লোকটাকে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দে। সেই সময় অধিকাংশ যাত্রীও ওই লোকটার পক্ষ নেন। আজ আইনের কারণে নারী যাত্রীরাও বাসে ধূমপানের প্রতিবাদ করেন এবং তার সঙ্গে অন্যরা সাহস যোগান। ধূমপায়ীদের সেই রঙিন দিনের রঙ আজ পাল্টে গেছে।  
অপরদিকে এ সংগঠকের কারণে গৌরীপুর উপজেলায় তামাক কোম্পানীগুলোর প্রচার-প্রচারণা শূণ্যের কোটায় চলে আসে। দেয়াল, দোকান ও পাবলিক প্লেস-পরিবহন থেকে সকল প্রচারণা সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। ২০১৫সনের ১৯ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দূর-রে-শাহওয়াজের উপস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাউসার আজিজের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রামমাণ আদালত অবৈধ বিজ্ঞাপন মুদ্রণ, প্রচার-বিলি, বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধকরণের দায়ে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো ৮০হাজার টাকা অনাদায়ে ২মাসের কারাদণ্ড ও ঢাকা টোবাকোকে ৫০হাজার টাকা অনাদায়ে ১মাসের কারাদণ্ডের আদেন দেন। যার অগ্রভাগে ছিলো সতিষা ও কিশোর সংঘ।
তিনি বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা প্রয়োগ হলে তামাক ব্যবহার দ্রুত কমে আসবে। এক্ষেত্রে তামাক কোম্পানীগুলোর কুটকৌশল বন্ধ করতে হবে।
এদিকে গৌরীপুরে সেই সময়ে তামাক কোম্পানীর গুলোর প্রচারণা না থাকলেও বর্তমান সময়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ সংগঠক। তিনি বলেন, গত বছরও সরকারিভাবে তামাকবিরোধী কার্যক্রমের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রশাসন এক্ষেত্রে ভূমিকা শূণ্যের কোটায়। ফটোসেশনের মাধ্যমে তামাকবিরোধী সেশন করে বরাদ্দকৃত অর্থের লুটপাট করা হয়েছে। তামাকবিরোধী কার্যক্রম নেই বললেই চলে এ উপজেলায়। সতিষা যুব ও কিশোর সংঘ নামক সংগঠনটিও আজ হাড্ডিসার অবস্থায় রয়েছে। গ্রামে এখন আর সামাজিক সংগঠন ক্লাব-সমিতির কার্যক্রম অচল। তেমনি অচল গৌরীপুর তামাকবিরোধী কার্যক্রম। এ থেকে উত্তোরণ করতে প্রশাসনের ভূমিকা প্রয়োজন। 
শ্রেষ্ঠ সংগঠক মো. রইছ উদ্দিন বলেন, উপজেলায় একটি টাস্কফোর্স কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিকে বারবার বলার পরেও একটি সভা করছে না। আজকের মাদকের ভয়াবহ অবস্থা, যার প্রাথমিক স্তর হলো ‘তামাক।’ এই তামাক থেকে বিরত করতে না পারলে মাদকবিরোধী কার্যক্রমও সফল হবে না। 

এই বিভাগের আরোও খবর

Logo